• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

৩ কোটি টাকার ভবন ব্যবহারের আগেই অনুপযোগী  

প্রকাশ:  ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৫৬
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের নবনির্মিত চারতলা ভবনের নকশায় ত্রুটি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বেতান্দর উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ—ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ ভবন নির্মাণ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন সেটি বুঝে নিতে নানা রকমের ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, সব কাজ ঠিকভাবে করে ময়মনসিংহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে ইতিমধ্যে ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো ভবনটি বুঝে নেয়নি। এর ফলে সরকারি টাকায় নির্মিত ভবনটি অব্যবহৃতই পড়ে রয়েছে। কবে থেকে এটি ব্যবহার করা হবে এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, নবনির্মিত ভবনটিতে নকশার ত্রুটির কারণে শিক্ষকদের শৌচাগারে যাওয়ার পথটি অনেকটা সুড়ঙ্গের মতো। এ পথে শৌচাগারে যেতে হবে মাথা নীচু করে। চারতলা ভবনটি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের আগেই দেয়ালের রং ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ফ্লোরের মোজাইক, টাইলসসহ অন্যান্য কাজ অনেকটা অসম্পূর্ণ। ছাদে লাগানো হয়েছে ভাঙ্গা টালি। অধিকাংশ স্থানে বৈদ্যুতিক তার ঝুলে আছে। প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ও শিক্ষক মিলনায়তন কক্ষে লাগানো প্লাস্টিকের সিলিং বাঁকা হয়ে আছে। সাবমার্সিবল পাম্পের ত্রুটির কারণে ট্যাংকিতে পানি ওঠে না।

ভবনটির নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্ব পালন করেছে ময়মনসিংহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম সোহেল এন্টার প্রাইজ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ব্যবহারের আগেই ভবনটিতে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। নির্মাণে ক্রটি ও অনিয়মের কারণে তিনি এখনো স্কুলের নতুন ভবন বুঝে নেননি। ঠিকাদার নানা মহলের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করছেন কাগজে স্বাক্ষর করতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার সোহেল মিয়া জানান, ভবনের নকশা অনুযায়ী শিক্ষকদের শৌচাগার করা হয়েছে। নির্মাণকাজে যেসব অভিযোগ করা হয়েছিল, সেই কাজগুলো ইতিমধ্যে সংস্কার করে ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার প্রমাণ চাইলে তিনি কোনো কাগাজ দেখাতে পারেননি।

বেতান্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল মুক্তাদির শাহিন বলেন, স্কুলের নতুন চারতলা ভবনের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। শুরু থেকে এ ভবনের নির্মাণকাজে অসংখ্য অনিয়ম করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ভবনটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী ও উপকরণ। এ ছাড়া ভবনের রং, ফ্লোর মোজাইক, টাইলসসহ অন্যান্য কাজ অসম্পূর্ণ। এসব অনিয়ম ও ত্রুটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হলে সম্প্রতি লোক দেখানো কিছু সংস্কার করে চূড়ান্ত বিল উত্তোলনের চেষ্টা চালাচ্ছেন ঠিকাদার।

ভবনের নকশা ও নির্মাণে ত্রুটির কথা স্বীকার করেছেন ময়মনসিংহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. ইউসূফ আলী। তিনি বলেন, ‘ভবনটি নির্মাণে কিছু ত্রুটি রয়েছে। ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ত্রুটি সারানোর জন্য। ইতিমধ্যে তারা ৮০ শতাংশ কাজও সম্পূর্ণ করেছে। বিদ্যালয়টি আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। অন্য কেউ দেখলে বুঝবে না যে ত্রুটি রয়েছে। সেখানে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির সঙ্গে ঠিকাদের মতপার্থক্য থাকার কারণে এ বিষয়টি সামনে এসেছে। সভাপতির সঙ্গে আমারও বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। তিনি একটু অন্যরকম। ত্রুটিপূর্ণ কাজ কিছুদিনের মধ্যে সম্পন্ন হলেই সেখানে গিয়ে ভবনটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’

ময়মনসিংহ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close